02 Oct 2024, 06:53 pm

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু টিকার ‘সফল’ গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু রোগের টিকার গবেষণা সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকরা জানিয়েছেন, এই টিকা ডেঙ্গু ভাইরাসের ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪; চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই কার্যকর।

২০১৫ সালে আইসিডিডিআরবি ও যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকরা ‘ডেঙ্গু ইন ঢাকা ইনিশিয়েটিভ (ডিডি)’ নামে এ গবেষণাটি শুরু করে। এর লক্ষ্য ছিল ডেঙ্গু টিকার উন্নয়নে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করা। শুরুতে আইসিডিডিআরবিতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, ল্যাবরেটরি পরীক্ষণ অবকাঠামো এবং ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অধ্যয়ন সংশ্লিষ্ট গবেষণায় প্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি করা হয়।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ডেঙ্গু টিকার এই সফল পরীক্ষা নিয়ে আন্তর্জাতিক সাময়িকী ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে এমনটিই জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু রোগের এই টিকার নাম দেওয়া হয়েছে টিভি-০০৫ (টেট্রাভেলেন্ট)। এই টিকা ডেঙ্গু ভাইরাসের ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪; চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই কার্যকর। এক ডোজের ডেঙ্গু টিকা টিভি-০০৫ মূল্যায়ন করে দেখা যায়, এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের প্রয়োগ নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম।

দ্য ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণাটি একটি দৈবচয়ন ভিত্তিক এবং ফেজ-২ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। এর মাধ্যমে টিভি-০০৫ টেট্রাভ্যালেন্ট লাইভ-অ্যাটেনুয়েটেড ডেঙ্গু টিকার নিরাপত্তা, ইমিউনোজেনিসিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির সক্ষমতা এবং তিন বছর পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্থায়িত্বের অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়েছে।

গবেষকরা ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের (বয়স ১-৪৯ বছর) ১৯২ জন স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণকারীকে ৪টি ভাগে ভাগ করে ৩ঃ১ অনুপাতে টিভি-০০৫ টিকা বা প্লাসিবো প্রদান করেছেন। এরপর তারা পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেছেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, টিকা দেওয়ার পরে বেশিরভাগ স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে ৪টি ডেঙ্গুর সেরোটাইপের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। যারা আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের অ্যান্টিবডির পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। যদিও গবেষণাটির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করার জন্য ডিজাইন করা হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের কোনো ঘটনা শনাক্ত করা যায়নি। গবেষণালব্ধ এই ফলগুলো ডেঙ্গুপ্রবণ জনগোষ্ঠীতে ব্যাপকহারে টিভি-০০৫ ডেঙ্গু টিকা ব্যবহারের জন্য উপযোগী করে তোলার পাশাপাশি, তৃতীয় ধাপের কার্যকারিতা ট্রায়াল পরিচালনার জন্য সমর্থন জোগাড় করতে সহায়তা করবে।

আইসিডিডিআরবির গবেষকদের মধ্যে প্রধান গবেষক হিসেবে রয়েছেন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী রাশিদুল হক এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন মো. শফিউল আলম, সাজিয়া আফরিন ও মো. মাসুদ আলম।

রাশিদুল হক বলেন, ডেঙ্গু একটি মশা বাহিত ভাইরাস যা বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য একটি কার্যকর এবং টেট্রাভালেন্ট ডেঙ্গু টিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মানুষের অংশগ্রহণে টিভি-০০৫ টিকার গবেষণা করতে পেরে আমরা গর্বিত এবং আশা করি আমাদের কাজ ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে একটি কার্যকর টিকা প্রাপ্তি ত্বরান্বিত করবে। টিভি-০০৫ একমাত্র একক ডোজের টেট্রাভ্যালেন্ট ডেঙ্গু টিকা, যা এই টিকাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এটি ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের সব কয়টির বিরুদ্ধেই ইমিউন রেসপন্স তৈরি করে, যা যে কোনো টেট্রাভ্যালেন্ট ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷

তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির মৃদু লক্ষণে জ্বর এবং হাড়ের ব্যথা হয় এবং গুরুতর ক্ষেত্রে শক, রক্তপাত এবং অনেকক্ষেত্রে মৃত্যুও ঘটে। সাধারণত ডেঙ্গুর চারটি ধরন (ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩, ডেন-৪) বা সেরোটাইপ একক বা সম্মিলিতভাবে সক্রিয় থাকতে পারে। যেকোনো সেরোটাইপই একজন মানুষকে অসুস্থ করতে পারে। তবে অন্য কোনো সেরোটাইপ দিয়ে দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

২০০৯ সাল থেকে ইউভিএম-এর ভ্যাকসিন টেস্টিং সেন্টার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ)-এর তৈরি ডেঙ্গু টিকার মূল্যায়ন করে আসছে। ইউভিএম টিমের নেতৃত্বে রয়েছে প্রফেসর বেথ কির্কপ্যাট্রিক, এমডি। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন মেরি ক্লেয়ার ওয়ালশ, পিএ; ক্রিস্টেন পিয়ার্স, এমডি; ডোরোথি, এমএস; শন ডিয়েল, পিএইচডি; এবং মারিয়া কারমোলি, বিএস। তাদের ডেঙ্গু টিকা প্রোগ্রামটি ইউভিএম ভিটিসি এবং ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের ভাইরাল ডিজিজেস ল্যাবরেটরির সিনিয়র গবেষক স্টিফেন হোয়াইটহেড, পিএইচডি (যিনি একজন ভাইরোলজিস্ট এবং টিভি-০০৫ টিকার উদ্ভাবকদের একজন) এবং জনস হপকিন্স স্কুল পাবলিক হেলথের আন্না ডারবিন এমডি-এর সঙ্গে একটি দীর্ঘ পারস্পরিক সহযোগিতার ফসল। আইসিডিডিআর,বি-র সঙ্গে এই সহযোগিতামূলক কাজের আগে, ইউভিএম ভিটিসি সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে কয়েক ডজন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পরিচালনা করেছে, যা মূলত ডেঙ্গু টিকার একক ও টেট্রাভ্যালেন্ট ফর্মুলেশন এবং কনট্রোলড হিউম্যান চ্যালেঞ্জ মডেলের ছিল।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 2712
  • Total Visits: 1097788
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1639

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বুধবার, ২রা অক্টোবর, ২০২৪ ইং
  • ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
  • ২৯শে রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সন্ধ্যা ৬:৫৩

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031   
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018